হঠাৎ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে কক্সবাজার শহর। আজ সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় শহরের প্রধান সড়কে কয়েক শ মানুষ টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় সড়কের দুই পাশের কয়েক হাজার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সমুদ্রসৈকত ও হোটেল–মোটেল জোনে কয়েক শ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলার আসামি করা নিয়ে শহরজুড়ে এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
হোটেল–রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সৈকত ভ্রমণে আসা ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক। সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেড দেওয়ায় এবং পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির করায় দূরপাল্লার শতাধিক বাস আটকা পড়েছে। রাতের বেলা এসব বাসে চড়ে অন্তত চার হাজার পর্যটকের কক্সবাজার ত্যাগের কথা ছিল বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৭ অক্টোবর রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করার ঘটনায় আজ বেলা দুইটার দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা হয়। মামলাটি করেন মোনাফ সিকদারের বড়ভাই মো. শাহজাহান। মামলায় গুলি করার নির্দেশদাতা হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে দুই নম্বর আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও সাত–আটজনকে আসামি করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মামলা গ্রহণের খবর ছড়িয়ে পড়লে মুজিবুর রহমানের কয়েক হাজার অনুসারি, দলীয় নেতা–কর্মী ও সমর্থক রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় তাঁরা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁরা। এ সময় দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল–রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যায়।
মামলার বাদি মোনাফ সিকদারের ভাই মো. শাহজাহান বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোনাফ সিকদার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে শুটকি মার্কেটে মোটরসাইকেল নিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিটি মোনাফ সিকদারের পেটের একপাশে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। বর্তমানে মোনাফ সিকদার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মোনাফ সিকদার গতকাল শনিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে। ওরা (দুর্বৃত্তরা) গুলি করার সময় বলছিল “তুই মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে লাগছিস? মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে আর লাগবি?” এই বলে পিছন থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’
মামলার আসামি হওয়া প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার মোনাফ সিকদারকে যখন গুলি করা হয়, তখন তিনি (মেয়র) ঢাকায় ছিলেন। সামনে জেলা আওয়ামী লীগের সন্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে তাঁকে বিতর্কিত করতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মিথ্যা মামলায় আসামি করেছে।
মিথ্যা মামলায় তিনি জেলে যেতে প্রস্তুত আছেন জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি জনগণের রাজনীতি করেন, শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করেন। তবে শহরে কারা আন্দোলন করছে, দোকানপাট কে বন্ধ করছে—এসব তাঁর জানা নেই।
মামলায় দুই নম্বর আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হওয়ার পরও আমি যদি মিথ্যা মামলার আসামি হই, তাহলে সাধারণ নাগরিকের কী অবস্থা, তা সহজে আন্দাজ করা যায়। মোনাফ সিকদারের ভাইয়ের মামলায় আমি আসামি হবো স্বপ্নেও ভাবিনি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার একজন মেয়রের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা গ্রহণের আগে ঘটনার সত্যমিথ্যা যাচাই করা উচিত ছিল পুলিশের। এখন তা না করে মামলা গ্রহণ করায় কক্সবাজারের পরিস্থিতি অশান্ত এবং উত্তপ্ত হয়ে গেল। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এই অচলাবস্থা চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে আন্দোলনকারীরা।
মামলার বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হতে পারে। এই মামলাও সেরকমভাবে হয়েছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে।