পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কোন্দানালা এলাকায় নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই একটি সেতু ধসে পড়েছে। গতকাল রোববার রাতে নির্মাণাধীন সেতুটির পাঁচটি গার্ডার ধসে পড়ে। এলাকাবাসী সেতুটি ধসে পড়ার পেছনে ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজকে দায়ী করছেন। তবে অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর একে স্রেফ দুর্ঘটনা বলছেন। আজ সোমবার সকাল থেকে ধসে পড়া সেতু দেখতে আশপাশের এলাকার লোকজন ভিড় করছেন।
সুনামগঞ্জ সওজ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সড়কের পাগলা পয়েন্ট থেকে জগন্নাথপুর উপজেলা অংশে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি পিসি (প্রিস্ট্রেসড কংক্রিট) গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সওজ। এমএম বিল্ডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুগুলোর কাজ করছে। সড়কের কোন্দানালা এলাকায় নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫০ দশমিক ১২ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। এক বছর ধরে সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা।
প্রসঙ্গত, ভবনের ক্ষেত্রে যেমন বিম, সেতুর জন্য তেমনি গার্ডার। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কলামের ওপর বিম বসানো হয় আর গার্ডার বসানো হয় পিলারের ওপর। পিলার ও স্ল্যাবের মাঝখানে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এই গার্ডার বসানো হয়। মূলত ভার্টিক্যাল লোড নেওয়ার জন্য গার্ডার ব্যবহার করা হয়। সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি বা অন্যান্য পরিবহনের ভার বা লোড সামাল দেওয়াই গার্ডারের কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির পাঁচটি গার্ডার ধসে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ঘটনাস্থলে কথা হয় দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রওশন খান সাগরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিম্নমানের কাজের কারণেই সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে পড়ল। এটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-ঢাকা যোগাযোগে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত আঞ্চলিক এ মহাসড়ক।
এই সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সড়কের সাতটি সেতু ছাড়াও উপজেলার রানীগঞ্জে ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি বড় সেতুও বাস্তবায়ন করছে। এখন তাদের একটি সেতু এভাবে ধসে যাওয়ায় বাকি সাতটি সেতুর কাজের মান নিয়ে আমরা চিন্তিত।’ধসে পড়া সেতুর পাঁচটি গার্ডার। আজ সোমবার সকালে পাগলা–জগন্নাথপুর–আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কে
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হারুনুর রশীদ বলেন, হাইড্রোলিক জ্যাকের (ক্রেন) মাধ্যমে গার্ডার বসানোর সময় জ্যাকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, যার ফলে গার্ডার পড়ে যায়। তিনি বলেন, একটি গার্ডার থেকে আরেকটি গার্ডারের দূরত্ব দুই মিটার। যে কারণে একটির ধাক্কায় আরেকটি—এভাবে পাঁচটি গার্ডার পড়ে যায়। কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। এতে তাদের উল্টো ৬০–৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে তিনি দাবি করেন।
কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ সওজ অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সেতুটির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করে একটি দুর্ঘটনায় সেতুটি ধসে পড়েছে। তিনি বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা। একটি গার্ডারের ওজন ১৬০ টন। ফলে গার্ডারটি বসানোর সময় হাইড্রোলিক জ্যাকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় পাঁচটি গার্ডার ধসে পড়ে।
সুনামগঞ্জ সওজ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, এটি আসলে দুর্ঘটনা। অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ কাজের জন্য কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি।