কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের শাহেদল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুল হাসানকে চোখ-মুখ বেঁধে পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। পাশাপাশি বিকেলে শাহেদল-কিশোরগঞ্জ সড়কের আশুতিয়া বাজার এলাকায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান ছাড়াও শাহেদল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সেলিম মাহবুবসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।পথে পাঁচ–সাতজন সশস্ত্র লোক সড়কের দুই পাশে রশি ধরে আমার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে তাঁরা কোলে করে পার্শ্ববর্তী নরসুন্দা নদীপাড়ে নিয়ে যান। সেখানে লোকগুলো আমার কপালে ও কোমরের দুই দিকে তিনটি পিস্তল ঠেকিয়ে ধরেন এবং আমাকে বলেন, আমি যেন ৫ নম্বর শাহেদল ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন না করি।
এর আগে শাহেদল ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন আশুতিয়া বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি আমি আমার গ্রামের বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের গলাচিপা এলাকা থেকে জেলা শহরের নগুয়া বটতলার উদ্দেশে মোটরসাইকেলে করে একা আসছিলাম। পথে আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর সড়কের রামপুর ও চরপুমদী বাজারের মাঝামাঝি জায়গায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ–সাতজন সশস্ত্র লোক সড়কের দুই পাশে রশি ধরে আমার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে চার–পাঁচজন লোক কোলে করে পার্শ্ববর্তী নরসুন্দা নদীপাড়ে নিয়ে যান। সেখানে লোকগুলো আমার কপালে ও কোমরের দুই দিকে তিনটি পিস্তল ঠেকিয়ে ধরেন এবং আমাকে বলেন, আমি যেন ৫ নম্বর শাহেদল ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন না করি। যদি নির্বাচন করি, তাহলে আমাকে খুন করবে বলে হুমকি দেন।’
কামরুল হাসান বলেন, ‘তাঁরা আমাকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড়, লাথি ও ঘুষি মেরে আমাকে তিনটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে চোখের বাঁধন একটু ওপরে তুলে দেন। এ সময় আমি প্রাণরক্ষার্থে স্বাক্ষর দিতে গিয়ে দেখি তাঁরা তিনজন তিনটি পিস্তল ধরে আমার দিকে তিনটি স্ট্যাম্প এগিয়ে দিয়েছেন। পরে আমার স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে হুমকি প্রদর্শন করে লোকগুলো বলেন, এরপরও যদি আমি নির্বাচন করতে চাই তাহলে আমাকে খুন করে আমার টাকাপয়সা ও সম্পত্তি ছিনিয়ে নেবেন।’
এ ঘটনার পর কামরুল হাসান প্রায় দুই দিন বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে জানান। পরে গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে তিনি থানায় গিয়ে মামলা করার জন্য এজাহার দেন। তবে এটি এখনো মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি।
কামরুল হাসান আরও বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে তিনি এলাকার জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনেও তিনি শাহেদল ইউপি চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কারা বা কেন তাঁকে হুমকি দেওয়া হলো, এ বিষয়ে তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ, এর আগে কখনো তাঁর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন এখন আতঙ্কে রয়েছেন। তাই তিনি এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক সঠিক আইনি পদক্ষেপসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এ ব্যাপারে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই তিনি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।
শাহেদল ইউপির সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত হয়। শিগগিরই নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।