1. news@khoborprotikhon.com : খবর প্রতিক্ষণ ডেস্ক : খবর প্রতিক্ষণ ডেস্ক
  2. shourav.kst.bd@gmail.com : জুবায়ের কারিম সৌরভ : জুবায়ের কারিম সৌরভ
চাল, আলু পেঁয়াজের পর এবার ভোজ্যতেলও সিন্ডিকেট - খবর প্রতিক্ষণ
বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞাপন

চাল, আলু পেঁয়াজের পর এবার ভোজ্যতেলও সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১
  • ২৪০ বার দেখা হয়েছে

চাল, আলু পেঁয়াজের পর এবার ভোজ্যতেল নিয়েও সিন্ডিকেট কারসাজি শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাঠে নেমেছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। সরকার খোলা তেলের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও মালিকরা তা মানছেন না। এতে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে ভোজ্য তেলের দাম। রেকর্ড ভেঙে খুচরা বাজারে বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। যা কিছুদিন আগেও ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।

 

 

পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে লিটারে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর গত পাঁচ মাসে বেড়েছে লিটারে ২৫ টাকা পর্যন্ত। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই সততাপরায়ণ ও বিশ্বস্ত নয়। তাদের মধ্যে ন্যায়বোধ ও মানবিক গুণাবলীও অত্যন্ত কম। এ কারণে অন্যায় মজুদ ও যথেচ্ছ দাম বাড়িয়ে মুনাফা শিকার তাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

জানা যায়, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত ২২শে অক্টোবর সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করেন তেল ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটার দুই টাকা কমানোর ঘোষণাও দেন ব্যবসায়ীরা। সে সময় সয়াবিন ৯২ থেকে দুই টাকা কমিয়ে ৯০ টাকা, পামওয়েল ৮২ থেকে দুই টাকা কমিয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ওই মূল্য অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। তবে সরকারের নির্ধারিত মূল্যে তেল বিক্রি করেননি ব্যবসায়ীরা। বরং বিভিন্ন অজুহাতে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে দাম।

 

 

জানা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে এই স্বেচ্ছাচারিতার পেছনে রয়েছে বড় বড় পরিশোধনকারী কারখানার সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই নির্ধারণ করে বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য। রাজধানীর পাইকারি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দেশের অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী কারখানা মালিকরা যদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তরিক না হন, তাহলে দাম কমানো সম্ভব নয়।

 

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে মিল মালিকদের কারসাজি দীর্ঘদিনের। তাদের এই কারসাজি ধরতে অতীতে কয়েকবার রিফাইনারি কারখানার প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও টিকে গ্রুপও বাদ যায়নি। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং টিম মেঘনা ও সিটি গ্রুপের মিলও পরিদর্শন করেছে। এর আগেও কয়েকবার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন এই সব মিলমালিক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপের পরও তারা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন।

 

 

সূত্র জানায়, প্রতিবছর রমজানে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়ে। ওই এক মাসে দেশে প্রায় পৌনে দুই থেকে দুই লাখ টন সয়াবিনের প্রয়োজন হয়। অন্যান্য মাসে চাহিদা সোয়া দুই লাখ টন। তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্নভাবে মনিটরিং করার পরও দাম বাড়ানো থেকে তাদের বিরত রাখা যায় না। তারা শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়, একযোগে কয়েকজন মিলে আকস্মিক আমদানির পরিমাণও বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

সিন্ডিকেটের বিষয় অস্বীকার করে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, সিন্ডিকেট কথাটি আমাদের দেশে খুবই সস্তা হয়ে গেছে। কোনো সিন্ডিকেট আমাদের নজরে পড়েনি। মূলত সয়াবিন তেলের বাজার বিশ্ববাজারেও চাড়া। আর আমরা বিশ্ববাজারের ওপর ১০০ পার্সেন্ট নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম চড়া তাই আমাদের এখানেও বেড়েছে। করোনার সময় বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেই অবস্থা এখনো চলছে।

 

 

আমরা ভ্যাট কমানোর কথা বলেছি। এই ব্যবসায়ী বলেন, তেলের দাম কমাতে হলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। অথবা ভোজ্য তেলের ওপর থাকা তিনস্তরের ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। তিনস্তরে প্রতি লিটার তেলে প্রায় ১৮ টাকা ভ্যাট রয়েছে। বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনো সংকট নেই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তেলের বাজার ভয়াবহ খারাপ। দাম বাড়ছেই। ২৫ বছরের মধ্যে তেলের বাজারে এত দাম উঠল।’ তিনি আরো বলেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আমদানির বড় বাজার। এসব দেশে করোনার কারণে উৎপাদন কম। এ ছাড়া চীন এবার ব্যাপক হারে তেল কিনেছে। ফলে সংকটের মধ্যে আরো সংকট তৈরি হয়েছে।’ মিলমালিক ও সরকার পদক্ষেপ নিলে দামের হ্রাস টানা যেতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

 

 

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে খোলাবাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৫ টাকা লিটারে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০৭ থেকে ১১০ টাকায় ও এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে শতকরা ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এক বছর আগে পামওয়েল বিক্রি হতো ৯১ থেকে ৯৩ টাকা লিটার। বছর ব্যবধানে পামওয়েলের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল গেট থেকে তারা যে দামে তেল কিনছেন, সেই তুলনায় খুবই সামান্য লাভে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। তবে মিল গেটে তেল কেনার পর পরিবহন সমস্যার কারণে তেল আনতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। এতেও বাজারে তেলের দামের ওপর প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তি। সরবারহেও ঘাটতি রয়েছে তাই দেশের বাজারে দাম বাড়ছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের।

 

 

রাজধানীর হাতিরপুলের মুদি দোকানি আজহার আলী বলেন, পাইকার ও তেল কোম্পানিগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তেলের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রতি বছর শীত এলেই দাম বাড়ায়। তবে এবার বেশি বেড়েছে। সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে তারা বাজারে সংকট তৈরি করছে। তাছাড়া মিল মালিকরা যদি কম দামে তেল বাজারে না ছাড়েন, তাহলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। বেশি দামে কিনলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।

 

 

কাওরান বাজারের সোনালী ট্রেডার্সেও স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তি। দেশে কোম্পানির রেট অনুযায়ী দাম বেশি। আগের রেটে কেনা যে তেল ছিল সেগুলো আগের দামেই বিক্রি করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুই তিন মাসে লিটারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। এই দাম অন্যান্য খুচরা বাজারে গিয়ে আরো বাড়ছে। এই কয়েক দিনে লিটারে সবধরণের তেলের দাম অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে। আগে আড়াই হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণে খোলা সয়াবিন বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকায়।

 

 

ভোজ্য তেল আমদানিকারক সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। প্রতিটন ভোজ্য তেলের দাম ৭০০ ডলার থেকে ১২০০ ডলার হয়ে গেছে। এছাড়া চীন অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং করেছে। এ কারণেই দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।

 

 

এদিকে ভোজ্যতেলের এই ঊর্ধ্বমুখী দামের লাগাম টানতে সরকার অনুমতি দিলে পরিশোধিত পামওয়েল সরবরাহ করতে চায় এসজি ওয়েল রিফাইনারিজ লিমিটেড। বিদেশিদের চাহিদা মিটিয়ে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমান তেল দেশীয় বাজারে সরবরাহ করতে পারবে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে কোনো কোম্পানির জন্য শতভাগ রপ্তানি পণ্যের ১০ শতাংশ পণ্য দেশের বাজারে সরবরাহ করার অনুমতি রয়েছে। তবে এসজি ওয়েল রিফাইনারিজ লিমিটেডের এইসএস কোর্ড জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তালিকায় না থাকায় দেশের বাজারে সরবরাহ করতে পারেনি। গত বছরের জুন মাসে সরবরাহের অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী মোট রপ্তানির ১০ শতাংশ তেল দেশের বাজারে সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি।

 

 

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এসজি ওয়েল রিফাইনারিজ লিমিটেড মঙ্গলা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে তা রিফাইন (পরিশোধন) করে বিদেশে রপ্তানি করে। বিদেশি শ্রমিক-কর্মকর্তাসহ কারখানায় প্রায় ২০০ জন কর্মরত। এসজি ওয়েল কারখানায় বছরে ৬০ হাজার টন তেল রিফাইনারির সক্ষমতা রয়েছে। তবে বিদেশে বছরে রপ্তানি হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন। বাকি ২০ থেকে ২৪ হাজার টন তেল সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কম উৎপাদন করতে হচ্ছে। সরকার অনুমতি দিলে সক্ষমতার শতভাগ রিফাইন করে দেশের বাজারে সরবরাহ করতে পারবে কোম্পানিটি। এতে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের চড়া দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে। কারণ সুলভ মূল্যে বাজারে ছাড়া হবে এসজি ওয়েল।

বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন ইমেইল news@khoborprotikhon.com

বিজ্ঞাপন

এক ক্লিকে শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর ....

বিজ্ঞাপন

Design by Jottil.net © 2020
Language »