দেড় শ বছরের পুরোনো প্রথম শ্রেণির কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি। মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আনোয়ার আলী। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ও পৌরসভার সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
টানা দুই দফাসহ চারবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। যদি নির্বাচিত হন, এরপরও কি নির্বাচনে অংশ নেবেন?
আনোয়ার আলী: ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছি। শেখ হাসিনার ভালোবাসায় মনোনয়ন পেয়েছি। বয়স অনেক হয়েছে। এবারের পর আর কখনো নির্বাচন করব না। এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন।
জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিতে আপনার নামসহ পাঁচটি নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। কিন্তু আপনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে কোনো ফরম নেননি। তাহলে কীভাবে মনোনয়ন পেলেন?
আনোয়ার আলী: দেখেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি। আর শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার আলাদা সম্পর্ক আছে। তিনি আমাকে ভালোবাসেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমিই দলীয় মনোনয়ন পাব। তিনি যত দিন বেঁচে আছেন আমিই মনোনয়ন পাব। মনোনয়নের খবরটি আমাকে মোবাইলে প্রথম দেন আমির হোসেন আমু।
নেতা হিসেবে বা মেয়র হিসেবে দীর্ঘদিন পৌরসভার নেতৃত্বে আছেন। কেমন পৌরসভা গড়লেন?
আনোয়ার আলী: আমি তো নতুন মেয়র না। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। গত পাঁচ বছরে ৪৫ কিলোমিটার সড়ক, ৪২ কিলোমিটার নালা ও ৮৩ কিলোমিটার পানির পাইপ নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে। শহরে অত্যাধুনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সড়কবাতি, সড়ক বিভাজন করা হয়েছে। এতে যানজট নিরসন হবে। মরা গড়াই খাল খনন করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পৌরসভার গেট দিয়ে ঢোকার পর আমি সব জনগণের হয়ে যাই। সেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। এখানে কোনো রাজনীতি থাকে না। এ জন্যই বিরোধী দলের ভোটও আমি পেয়ে থাকি।
কাজ হচ্ছে কিন্তু জনগণ সেই তুলনায় সুফল পাচ্ছেন না এমন অভিযোগের ব্যাপারে কী বলবেন?
আনোয়ার আলী: মরা গড়াই খাল খননে একটি নকশায় জটিলতা ছিল। এ জন্য সুফল পেতে সমস্যা হচ্ছে। খালটি পুনরায় নকশা প্রণয়ন করে খনন করা হবে। আর শহরে যেসব ফুটপাত দখল হচ্ছে, সেগুলোতে অচিরেই অভিযান চালানো হবে। অবৈধ ইজিবাইক উচ্ছেদেও অভিযান চালানো হবে।
‘আশা করি ভালো নির্বাচন হবে। দলমত-নির্বিশেষে সবাই আমাকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। আমি কোনো হট্টগোলে বিশ্বাসী নই। সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে।’
আবার যদি আপনি নির্বাচিত হন তাহলে কী কাজ হাতে নেবেন?
আনোয়ার আলী: প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ সংরক্ষণ করার পাশাপাশি বৃদ্ধদের জন্য আশ্রম ও কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল ও তাঁদের শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে।
এই পাঁচ বছরে পরিষদ চালাতে গিয়ে অনেক সময় কাউন্সিলররা বাধা দিয়েছেন। সেটা নিরসনে কী করেছেন? ভবিষ্যতে কী আশা করছেন?
আনোয়ার আলী: এটা সত্যি, পরিষদ চালাতে গিয়ে বেশ কিছু বাধার মুখে পড়েছিলাম। তাঁদের বুঝিয়ে অনেক কাজও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিরোধিতা থাকবেই, তারপরও কাজ করে যেতে হবে।
এবার বিএনপির প্রার্থী ছাড়াও আরেকটি দলের প্রার্থী আছে। সে ক্ষেত্রে জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী।
আনোয়ার আলী: আমি সব সময় চাই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক। জনগণ কাজের মূল্যায়ন করবে। আমি তো তাদের সেবা দিয়ে আসছি। ভোটের মাধ্যমে কাজের বিষয়টি প্রমাণ হয়। আশা করি ভালো নির্বাচন হবে। দলমত-নির্বিশেষে সবাই আমাকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। আমি কোনো হট্টগোলে বিশ্বাসী নই। সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।