মাদারীপুরে শিবচরে আত্মীয়র বিয়ের অনুষ্ঠানে সেজেগুজে অংশগ্রহণ করায় কুলসুম বিবি(৩২) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী আব্বাস হাওলাদারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের চরবাচামারা রফিজউদ্দিন সরদারের কান্দি গ্রামে।
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার আব্বাস হাওলাদারের বড় ভাই ফজল হাওলাদারের মেয়ে সেলিনার বিয়ের অনুষ্ঠানে গৃহবধূ কুলসুম সেজেগুজে অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রতিবন্ধী স্বামী তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এই ঘটনা নিয়ে শনিবার সকালে স্বামী কুলসুমকে মারধর করেন। এসময় প্রতিবেশীরা কারণ জানতে চাইলে কুলসুম পুরো ঘটনাটিকে খুলে বলেন। এরপর প্রাথমিকভাবে প্রতিবেশীরা দুইজনের মিমাংসা করে দেন। কিন্তু ওই রাতে এই ঘটনার জের ধরে আব্বাস হাওলাদার স্ত্রী কুলসুমের হাত-পা রশি দিয়ে বেধে বেধড়ক পেটান। এসময় স্বামীর নির্যাতনে কুলসুম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এক পর্যায়ে আব্বাস কুলসুমের মৃত্যু নিশ্চিতে গলায় ছুরিকাঘাত করেন। এসময় স্থানীয়রা গৃহবধূর চিৎকারে এগিয়ে আসলে আব্বাস পালিয়ে যান। পরে কুলসুমকে মুমূর্ষ অবস্থায় প্রথমে পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতাল, এরপর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ঢাকা নেওয়ার আগে বৃহস্পতিবার ভোরে দুই সন্তানের জননী কুলসুমের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পরলে স্বামীর পুরো পরিবার এলাকা ত্যাগের চেষ্টা করে। এসময় অভিযুক্ত আব্বাসের দুই ভাই জয়নাল ও আয়নালকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও কুলসুমের মৃতদেহ বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদারীপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আব্বাসের প্রতিবেশী দাদান মাদবরের স্ত্রী মমতাজ বেগম জানান, প্রতিবন্ধী আব্বাস স্ত্রীর সাজগোজ কখনো পছন্দ করতেন না। তার ধারণা বিয়ের অনুষ্ঠানে স্ত্রী সেজেগুজে নিজেকে কাউকে দেখাতে গিয়েছিল।
আরেক প্রতিবেশী কহিনুর মাদবরের স্ত্রী আনোয়ারা বলেন, শনিবার রাতে কুলসুমের চিৎকার শুনে আমরা আব্বাসের ঘরে ছুটে আসি। এসে দেখি তার গলা দিয়ে শুধু রক্ত বেরুচ্ছে।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আব্বাসের ১০ বছরের ছেলে কামরুল হাওলাদার বলেন, ওই রাতে আমি আমার চাচার বাসায় ছিলাম। বাড়িতে এসে দেখি বাবা পলাতক মা হাসপাতালে। চাচির কোলে দুই বছরের বোন রিয়া মনি মায়ের জন্য কাঁদছে। মায়ের সঙ্গে আর কথা হয়নি।
কুলসুমের মা বরু বিবি বলেন, মাঝেমধ্যে আব্বাস ও তার পরিবারের লোকজন অকারণে আমার মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। গত শনিবার রাতে বিনা অপরাধে আমার মেয়ের ওপর হামলা চালিয়ে ছুরি দিয়ে গলাকেটে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি এমদাদ হোসেন জানান, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।