জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে অভ্যন্তরীন কোন্দল ও আধিপত্য  বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়,  ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকে সামনে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের বাড়িতে তার সমর্থীতদের জন্য মঙ্গলবার রাত ৭টায় খাবারের আয়োজন চলছিল। একই সময় যুবলীগের নেতাকর্মীরা আওনা ইউনিয়নের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যমুনা সার কারখানা গেটপাড় এলাকায় প্রবেশ করে। এসময় হেলাল মিয়া নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে দু’পক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে রামদা, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে তারাকান্দি শহীদ মিনার চত্বরের বিজয় মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া মোটর সাইকেলসহ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর এবং মালামাল লুটতরাজের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকালে তারাকান্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম, কনষ্টেবল ছালাম ও ছাইফুল আহত হন।

এছাড়া উভয়পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজমত আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, আনোয়ার হোসেন, মিজান, আবু তালেব, হাফিজুর, সাইফুল, লাল চাঁন, লিটন, জাহেদুল, উজ্জল, বেলাল, আবুল কালাম, মিন্টু, সাকিব, সাইদুল, ঠান্ডু, খালেক, ছানোয়ার, সেলিমসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহতদের জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন মুকুল বলেন, আওনা ইউনিয়ন যুবলীগ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে মিছিল শেষে সারকারখানার শহীদ মিনার চত্ত্বরে নির্মিত বিজয় মঞ্চ পরিদর্শনকালে রফিক বাহিনীর লোকজন অতর্কিত হামলা গুলি ও মারপিট করে। রফিকের লোকজন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান প- করতে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে মঞ্চে লাগানো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ মঞ্চ ভাংচুর করেছে তারা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কথিত প্রতিনিধি যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন মুকুলের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলকারীরা বিনা কারণে হেলাল নামে একজনকে মারপিট করে। এ ঘটনা থেকে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হামলাকারীদের গুলিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমামুনসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়।

এ ব্যাপারে তারাকান্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর বিজয় দিবস উপলক্ষে তারাকান্দি শহিদ মিনার চত্বরে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। এসময় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। এসময় ইটপাটকেলের আঘাতে আমিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হই। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, সংঘর্ষের বিষয়টি আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যারা ঘটিয়েছে দায়ভার তাদেরই।